বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
আব্দুল মান্নান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ১২অক্টোবর ২০২৪ ইং (শনিবার)রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার স্বনামখ্যাত ‘সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন’ নামক এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, সাদা মনের মানুষ, সর্বজনশ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলহাজ্ব শামসুদ্দিন ওরফে শমেস ডাক্তার ১২ অক্টোবর ২০২৪ আনুমানিক দুপুর ১:৩০ মিনিটের সময় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মরহুম সমেশ ডাক্তারের মৃত্যুর খবরে সারা এলাকার শোকের মাথাম লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়,পাসা-পাসি তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন , এবং তাঁর কর্মময় স্মৃতির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদনও করছে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। মরহুম সমেশ ডাক্তারের উদ্যোগে এই গ্রামে ১৯৮৪ সালে স্থাপিত হয় ‘সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন’ এবং ২০১৭ সালে এর সাথে যুক্ত হয় ‘মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতন’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোঃ শামসুদ্দিন ওরফে সমেশ ডাক্তার প্রথমে তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানার অর্থে ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেন এই প্রতিষ্ঠান। আয় বলতে মেহেরুন্নেসার সেলাই ও শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা সামান্য অর্থ। কালক্রমে পরিধি বেড়ে যাওয়ার ফলে বাড়তে থাকে ব্যয়। খরচ সংকুলান দিতে ধীরে ধীরে পৈতৃক জমি বেচতে থাকেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ১৭ বিঘা জমির সবটুকুই বিক্রি করে এতিমদের লালন-পালনে ব্যয় করে ফেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ির ভিটা বিক্রি করে গৃহহীন হন এবং নিজে পরিবার নিয়ে এতিমদের সাথেই বসবাস শুরু করেন। এজন্য তিনি সাদা মনের মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় বর্তমানে ৫২ শতাংশ জমির উপর এই প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়িয়ে আছে। এখানে বর্তমানে ৫০ জন বৃদ্ধা ও ১৫০ জন অনাথ শিশু বসবাস করছেন। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট পায় ১০০ জনের। এছাড়াও সহায়তা করেন কয়েকজন প্রবাসী, কিছু বিত্তবান ও সমাজ হিতৈষী।
তাঁর মৃত্যুর দুই দিন আগে ১০ অক্টোবর খুলনার সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে নির্মিত তিন তলা ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ভবনটি নির্মাণে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। এই ভবনে ২৫০ জন শিশু এবং প্রায় দুই শতাধিক বৃদ্ধার থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। উদ্বোধন শেষে অসুস্থ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেছিলেন, ‘বাবারা আমার আয়ু একেবারেই শেষের দিকে। তোমরা আমার ছেলের মতো। আমি মারা গেলে এই প্রতিষ্ঠানটি দেখে রেখো। একে টিকিয়ে রাখার জন্য সমাজের সকলের নিকট আমার আকুল আহ্বান তোমরা পৌঁছে দিও’।